• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ঢাকায় বসছে খামারিদের মিলনমেলা

  • ''
  • প্রকাশিত ১৭ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বগুড়ার তরুণ তৌহিদ পারভেজ পড়াশোনা করতে যান নিউজিল্যান্ডের রাজধানী অকল্যান্ডে। পড়ার বিষয় ছিল আন্তর্জাতিক ব্যবসায় (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস)। পড়ার ফাঁকে বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতেন আর জীব-জন্তুর ছবি তুলতেন। আন্তর্জাতিক নানা গণমাধ্যমে তার ছবি নিয়মিত ছাপা হতো। আলোকচিত্রের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা উইকি লাভস আর্থ ২০২১-এ জমা পড়া এক লাখের বেশি ছবির মধ্যে সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছেন তৌহিদ পারভেজ। আরেকটি শখ ছিল তার দুগ্ধ খামারে ঘুরে বেড়ানো। বিশাল বিশাল বিদেশি গাভি দেখে বিস্মিত হতেন। দেশে ফিরে ২০১১ সালে সাতটি এঁড়ে বাছুর কিনে নিজেই একটি গরুর খামার দিয়ে বসেন। এখন প্রায় ১২ বিঘা জায়গাজুড়ে তার বগুড়া ভাণ্ডার ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড। এর বাইরে ৩৫ বিঘা জমিতে ধান ও বিদেশি জাতের ঘাস চাষ করছেন। গাভি ছাড়াও খামারে মোটাতাজাকরণ করা কয়েকশ গরু লালন-পালন করা হচ্ছে।

মোহাম্মদ ইমরান হোসেন ২০০৮ সালে দুগ্ধ খামারের যে স্বপ্নবীজ পুঁতে ছিলেন, ১৬ বছর পর তা আজ অনেকের কাছে ঈর্ষানীয়। সাত থেকে এখন পশুর সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। বিবিএ করেছেন ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ২০০২ সালে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে পৈতৃক ঢেউটিনের ব্যবসায় নিজেকে জড়ান। সেই ব্যবসায় মন টেকেনি। ২০০৮ সালে নিজেই হাঁটেন নতুন পথে, একা। রাজধানীর বছিলায় ১০ কাঠা জমিতে গড়ে ওঠা ইমরান হোসেনের ‘সাদেক এগ্রো’ এখন দুগ্ধশিল্পের এক তাজা বিজ্ঞাপন। সময়ের হাত ধরে সেই খামারের ব্যাপ্তি বেড়েছে অনেক। ঢাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে কুমিল্লা, পাবনা, যশোর, বেনাপোল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়েছে দুগ্ধ প্রতিষ্ঠানটির সুখ্যাতি।

ইমরান হোসেন ও তৌহিদের মতো হাজার হাজার শিক্ষিত তরুণ খামার করে এখন সফল উদ্যোক্তা। এই স্পৃহা বৃহৎ পরিসরের সমাজ পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কিত সামাজিক ধ্যান-ধারণা বদলানোর জন্য যে দাবানল দরকার, উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের কাছে এখন তিনি অনুসরণীয়। শুধু খামার নয়, ব্যবসা নয় ইমরান হোসেন দেশের ক্ষুদ্র ও বড় খামারিদের এক ছাতার নিচে আনতে প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)। যে সংগঠনের সদস্য এখন ৫৫ হাজারেরও বেশি খামারি। সরকারের সঙ্গে কাধে কাধ মিলয়ে এই খামারিরাই প্রাণিসম্পদ খাতকে করেছেন স্বয়ংসম্পূর্ণ। সংগঠনের উদ্যোগে জেলায় জেলায় প্রাণী মেলা, সুলভমূল্যে মাংস-দুধ বিক্রি, প্রশিক্ষণ, সভা-সেমিনার, খামারি উৎসবসহ নানা আয়োজনে তৈরি নব দিগন্ত। আর খামারিদের নির্বাপণ নয়, উদযাপন করতেই গত কয়েক বছর ঢাকায় প্রাণিসম্পদ মেলার আয়োজন করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ কাউন্সিলের (বিপিআইসি)। প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরনো বাণিজ্যমেলা মাঠে বসছেন দুদিনের প্রাণিসম্পদ মেলা। এবারের মেলা অন্য বছরের চেয়ে ব্যতিক্রম। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ঢাকার বুকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে জমকালো মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ‘প্রাণিসম্পদে ভরবো দেশ, গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ’। বাস্তবায়ন করবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সহযোগিতায় থাকছে বিডিএফএ) ও (বিপিআইসিসি)।

গতকাল মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, পশু প্রদর্শনের জন্য তৈরি করা হচ্ছে স্টল। মেলার অন্যতম আকর্ষণ গরুর র‌্যাম্প শোর জন্য বানানো হয়েছে গ্যালারি। বিশাল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। মাঠ জুড়ে বড় প্যাভেলিয়ন করা হয়েছে। মাঠের আশপাশ ও ঢাকার বিভিন্ন সড়ক সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। গতকাল বিকেলে মেলার প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব এটিএম মোস্তফা কামাল, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক।

এ সময়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেন, এই মেলা প্রান্তিক খামারিদের জন্য একটি বড় সুযোগ। এখানে তারা পালন করা প্রতিটি গরু ভালো দামে দেশের স্বনামধন্য খামারিদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। এটি সব খামারির মিলনমেলায় পরিণত হবে। পাশাপাশি সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হবে।

বিডিএফএএর সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, প্রথমবারের মতো এবার মেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পেয়ে খামারিরা উজ্জীবিত। বিভিন্ন অঞ্চলের খামারি দেশসেরা পশুপাখি নিয়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে মুখিয়ে আছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে খামারিরা তাদের কথা তুলে ধরবেন। তার আগমনের মধ্য দিয়ে প্রাণিসম্পদ খাতে নবদিগন্ত উন্মোচন হবে। এ মেলার মাধ্যমে দর্শনার্থীদের প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন ও বিপণনে আগ্রহী করে তোলাই লক্ষ্য। তবে এই প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে গো খাদ্যের দাম কমনো, জাত উন্নয়ন, বিদ্যুৎ বিল কমানোসহ বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রয়োজন।

সিনিয়র সহ-সভাপতি আলী আজম শিবলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় খামারিরা এ দেশে প্রাণিসম্পদ খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। কিন্তু সমৃদ্ধ এই খাত নানা কারণে এখন ধুকছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা নানা দাবি তুলে ধরবো। গো-খাদ্যের দাম কমানো, পশুর জাত উন্নয়ন, বিদ্যুৎ বিলে ভর্তুকিসহ নানা রকম নীতি সহায়তা দিলে এক সময় বাংলাদেশ মাংস ও দুধ রপ্তানি করতে পারবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, ব্যতিক্রমী এ মেলায় কয়েক হাজার খামারি তাদের সেরা গরু, ছাগল, গয়াল, মহিষ, ঘোড়া, ভেড়া, দুম্বা, পোষা প্রাণী, পাখিসহ নানা পশু তুলবেন। মেলায় তিনশ স্টল কয়েক হাজার প্রাণী থাকবে। সেই সঙ্গে মেলার মূল আকর্ষণ হিসেবে গরুর র‌্যাম্প শো অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় বিভিন্ন ১৯টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হবে। আয়োজন করা হবে প্রাণিসম্পদের বর্তমান অবস্থা ও সম্ভাবনা বিষয়ে বেশ কয়েকটি সেমিনার। বিনামূল্যে মেলা ঘুরে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads